রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৫২,৬১২ কোটি টাকা

রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৫২,৬১২ কোটি টাকা

স্বদেশ ডেস্ক:

খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারি ব্যাংকগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৬১২ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণে এখনো শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক। তবে এ ব্যাংকটি আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ আদায়ে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক ভালো করেছে। সরকারি ৬ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে চারটি ব্যাংক।

গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পারফরম্যান্স মূল্যায়নে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সার্বিকভাবে এসব সূচকে ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স ‘সন্তোষজনক নয়’ বলে মন্তব্য করেছে মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দেয়া হয়েছে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যেন তারা খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়।

বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অর্থবছরের তিন মাসে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে আদায় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ১৮৯ কোটি টাকা। অর্জনের হার ১৯ শতাংশ। একইভাবে আলোচ্য সময়ে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০ কোটি টাকা। আদায় করা গেছে ২৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্জনের হার ৩৩ শতাংশ।

অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের টার্গেট রয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। আদায় করা গেছে ৫৮ কোটি টাকা (১৫%)। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় করার কথা ছিল ২৫০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা (১৫%)। বেসিক ব্যাংকের খেলাপি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫৫ কোটি টাকা। আদায় করা গেছে ৪৩ কোটি টাকা (২৭%)।

এই ব্যাংকগুলোকে ত্রৈমাসিক হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার ২৫ ভাগ খেলাপি ঋণ আদায়ের কথা ছিল। এর মধ্যে একমাত্র জনতা ব্যাংক তা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২ ভাগ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ হালনাগাদ প্রক্রিয়াটি একটু দেরিতে শুরু হওয়ায় গত প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ আদায় সন্তোষজনক হয়নি। অনেক ব্যাংকার আমাদের জানিয়েছেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য অনেক খেলাপি তাদের ঋণ পরিশোধ করেননি। ফলে আদায় পরিস্থিতিও ভালো হয়নি।
তবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আগামী প্রান্তিকে এ অবস্থা ভালো হবে । কারণ ব্যাংকের অনেক খেলাপি ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তাদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নিচ্ছেন।

এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আগামী জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের স্থিতি কী পরিমাণ রাখতে হবে তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ অনুযায়ী আগামী বছরের জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি রাখতে হবে ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বর্তমানে যা রয়েছে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। একইভাবে জনতা ব্যাংকের খেলাটি ঋণের স্থিতি রাখতে হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। এখন রয়েছে ১৯ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা।

অগ্রণীকে স্থিতি রাখতে হবে ৫ হাজার ৬০০ কোট টাকা। এখন আছে ৬ হাজার কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি রাখতে হবে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বর্তমানে রয়েছে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এবং বেসিক ব্যাংকের খেলাটি ঋণের স্থিতি রাখতে হবে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এখন যা আছে ৮ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর ব্যর্থতার কারণে এবার খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে যে মোট ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে তার মধ্যে শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে ২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা এবং অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ থেকে ৪০২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।

ব্যাংকগুলোর সাথে পৃথকভাবে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’র আওতায় এ পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877